ঢাকা,বুধবার, ৬ নভেম্বর ২০২৪

কক্সবাজার সৈকতে বিচ কর্মীরাই এখন নানা অপরাধে জড়িত

শাহজাহান চৌধুরী শাহীন, কক্সবাজার, ৩০ অক্টোবর ॥

কক্সবাজার বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির অধীনে নিয়োগকৃত ও সৈকতে নিয়োজিত বিচ কর্মীরাই এখ নপর্যটকদের কাছে মুর্তিমান এক আতংকের নাম। তারা এখন চাঁদাবাজি, ছিনতাই, ইভটিজিংসহ নানা ধরনের গুরুতর অপরাধে জড়িয়ে পড়েছে।

এসব বিচকর্মীদের হাত থেকে পর্যটক থেকে স্থানীয় ব্যবসায়ীরাও রক্ষা পাচ্ছে না। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করলেও কোনো প্রতিকার না পাওয়ায় এসব বিচকর্মীরা দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।

সৈকতে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে বিচকর্মীরা প্রতি মাসে প্রায় পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।

স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, মাসের পর মাস চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ হয়ে কয়েকদিনে বিচ বাইক ও ওয়াটার বাইক বন্ধ রেখেছিল ব্যবসায়ীরা। পরে গত শনিবার জেলা প্রশাসনের পর্যটন সেলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এহসান মুরাদের মধ্যস্থতায় বিচকর্মীদের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের সমঝোতার মাধ্যমে ব্যবসায়িক কার্যক্রম ফের চালু হয়।

ওয়াটার বাইক ও বিচ বাইকের সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ীরা জানান, তাদের কাছে বিচকর্মীরা সৈকতে এখন মুর্তিমান আতঙ্কের নাম। কেউ অভিযোগ করলেও রয়েছে বিপদ। অনেকে অভিযোগ করে উল্টো জেল-জরিমানার শিকার হয়েছেন।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের পর্যটন সেলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এহসান মুরাদ বলেন, ‘বিচকর্মীদের বিরুদ্ধে অনিয়মের প্রমাণ কেউ হাজির করতে পারবে না। প্রমাণ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ মাহিদুর রহমান বলেন, ‘বিচকর্মীদের বিরুদ্ধে বেশ কিছু অভিযোগ শোনা যাচ্ছে। কারো অপকর্মের কারণে জেলা প্রশাসন এবং কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের ভাবমূর্তির ক্ষুন্ন হলে সহ্য করা হবে না। আমি দ্রুত বৈঠক ডেকেছি। এসব বিষয়ে কোনো অনিয়ম থাকলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

সৈকতের স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, সৈকতে আসলে বিচকর্মীদের দায়িত্ব কী তা কেউ জানে না। তারা শুধু চাঁদাবাজিতেই ব্যস্ত থাকেন তারা। সাগরে চলমান ওয়াটার বাইক থেকে দৈনিক ২০০ টাকা, ৪০ জন ঝালমুড়ি বিক্রেতার কাছ থেকে দৈনিক ২০ টাকা হারে ৮০০ টাকা, ১০০ জন কপি বিক্রেতার কাছ থেকে দৈনিক ২০ টাকা হারে ২০০০ টাকা, ৫০ জন বাদাম বিক্রেতার কাছ থেকে দৈনিক ২০ টাকা হারে ১০০০ টাকা, ৩০ জন কলা বিক্রেতার কাছ থেকে ২০ টাকা হারে ৬০০ টাকা, ২৫ জন ঘোড়া চালকের কাছ থেকে ৫০ টাকা হারে ১২৫০ টাকা এবং প্রায় ১০০ জন চিপস, পানি সিগারেটসহ অন্য হকারের কাছ থেকে ২০ টাকা হারে ২০০০ টাকা দৈনিক চাঁদাবাজি করেন বিচকর্মীরা। তবে এসব করেন জেলা প্রশাসনের নামভাঙ্গিয়ে।

কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার হোসাইন মোহাম্মদ রায়হান কাজেমী বলেন, ‘বিচকর্মীদের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে নানা অভিযোগ আসছে। এর মধ্যে পর্যটকদের ইভটিজিং এবং মোবাইল ছিনতাইয়ের ঘটনাও রয়েছে। যেহেতু তারা একটি প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, তাই আমরা তাদের বিরুদ্ধে সরাসরি অ্যাকশনে যাই না। সব বিষয় আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এবং জেলা প্রশাসনকে অবহিত করেছি।’

সৈকতে ব্যবসায়ি ও স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, বিচকর্মীদের মধ্যে সুপারভাইজার মাহবুব, শফিউল ও জাহেদ সবচেয়ে বেশি বেপরোয়া। তারা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বেশি খারাপ আচরণ করেন। পর্যটকদের সঙ্গেও দুর্ব্যবহার করেন। এর মধ্যে বিচকর্মী মাহবুব সুপারভাইজার হওয়ার পর থেকে সবচেয়ে বেশি বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন বিচকর্মীরা। মাহবুবের তিন ভাই বিচকর্মী বলে জানা গেছে। এমনকি মাহবুব কখনো কখনো নিজেকে ম্যাজিস্ট্রেট বলেও দাবি করেন। কেউ তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করলে পরবর্তীতে ব্যবসার লাইসেন্স বাতিল ও সৈকতে ব্যবসা করতে দেবে না বলে হুমকি দেওয়া হয়।

বিচকর্মীদের সুপারভাইজার মাহবুব দাবি করেন, তিনি এসব অনিয়মের সঙ্গে জড়িত নন। তিনি বলেন, ‘কেউ তো সামনে অভিযোগ করে না। সবাই পেছনে পেছনে বলে। এসব বলে কেউ আমার কিছু করতে পারবে না।’

পাঠকের মতামত: